স্টাফ রিপোর্ট
সিলেট নগরীর এয়ারপোর্ট থানা এলাকার বাদামবাগিচায় ৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং একাধিক মামলার আসামি ইলাল আহমদ ওরফে ইলাল রাজার কলোনি নিচে প্রকাশ্যে চলছে লাখ লাখ টাকার জুয়া ও মাদকের রমরমা আসর। স্থানীয়দের অভিযোগ, নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু জুয়াড়ী এসে কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে এ অনৈতিক কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। ইলাল আহমদ ওরফে ইলাল রাজা সিলেট নগরীর ৬নং ওয়ার্ডের বাদামবাগিচা ১নং গলির মৃত রাজা মিয়ার ছেলে।
৬নং ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, যুবলীগ নেতা ইলাল রাজা ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে ইলাল রাজার কলোনিতে জুয়া ও মাদক সেবন প্রকাশ্যে চলছে। এর ফলে তরুণ সমাজ ও ব্যবসায়ীসহ বহু পরিবার জুয়া খেলে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এলাকায় চুরি, ছিনতাইয়ের আতঙ্কও বেড়েছে। এলাকাবাসী প্রশাসনের প্রতি এসব জুয়া ও মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করার আকুল আবেদন জানিয়েছেন।
জানা যায়, ইলাল রাজার নেতৃত্বেই প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তির, তাস ও অন্যান্য জুয়া এবং মাদকের আসর বসছে। এই জুয়ার আসরে বিভিন্ন এলাকা থেকে কুখ্যাত জুয়াড়ীরা এসে সমবেত হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা জুয়াড়ীরা এখানে লাখ লাখ টাকা হাতবদল করছে এবং প্রতিদিন অনেকেই এই চক্রের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন। প্রশাসনের অসাধু কর্তাদের নীরবতার সুযোগ নিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই নিষিদ্ধ জুয়ার আসর চালাচ্ছে। জুয়াকে কেন্দ্র করে স্পটে নেশা গ্রহণের পরিমাণও সমান তালে চলায়, জুয়া ও মাদকের মোহে পড়ে অনেকে পথে বসছেন। চলমান জুয়া ও মাদকের আসর নিয়ে এ অঞ্চলের অভিভাবক ও তাদের পরিবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে অনেক সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও বেধে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে ছিলেন কাউন্সিলর আফতাবের ‘রাজা’ হিসেবে পরিচিত যুবলীগ ক্যাডার সিলেট মহানগর ৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলাল আহমদ ওরফে রাজা। ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের আগে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা রাজা করেনি। শিলং তীর, জুয়া, মদের আসর, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে মানুষকে জিম্মি করে রেখেছিল। তবে ৫ আগস্ট পট-পরিবর্তনের পর কিছুটা গা ঢাকা দিলেও ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে যুবলীগ ক্যাডার ইলাল আহমদ ওরফে রাজা। সে আবারও প্রকাশ্যে শুরু করেছে মদ, গাঁজা ও জুয়ার আসর। বর্তমানে আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ির কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজশে সে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ।
জানা যায়, রাজা মিয়ার কলোনিতেই এই রাজা তার ভাই কালাম আহমদ উরফে কালাম রাজাকে নিয়ে এই জুয়া ও মাদকের সাম্রাজ্য আবারও গড়ে তুলেছে। জুয়ার সেই তীরে বিদ্ধ হয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সিলেটের নানা পেশা ও শ্রেণির মানুষ। পটপরিবর্তনের পর বন্ধ থাকার পর সিলেটে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন এই জুয়াড়ি চক্রের সদস্যরা।
আম্বরখানা ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই শেখ মো. মিজানুর রহমান জানান, তিনি এক মাস হয়েছে যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে তার আম্বরখানা ফাঁড়ি মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৮০ জনের মতো জুয়াড়ি ও মাদক কারবারীকে আটক করেছে। তিনি আরও বলেন, তারা হিলাল রাজাসহ যারা এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করবেন। পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাদের পুলিশ কমিশনার মহোদয়ের নির্দেশে সবসময় মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে আমাদের জিরো টলারেন্স রয়েছে।”
এয়ারপোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, “আমাদের কমিশনারের নির্দেশে মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমরা অভিযান করেই এটার প্রমাণ করব পুলিশের সাথে অপরাধীদের কোনো সম্পর্ক নেই।”
Leave a Reply